করোনা ভাইরাস অনুচ্ছেদ রচনা

করোনা ভাইরাস অনুচ্ছেদ রচনা। করোনা ভাইরাস সমগোত্রীয় ভাইরাসের একটি বড় পরিবার, যেগুলি সাধারণ সর্দিজ্বর থেকে শুরু করে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (মার্স) ও সিভিয়ার অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোমের (সার্স) মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে। ২০১৯ সালে চীনের উহান প্রদেশে একটি নতুন করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সনাক্ত করা হয়েছিল। এটি একটি নতুন করোনা ভাইরাস যা আগে কখনো মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। আমাদের আজকের পোস্টে এ সম্পর্কে অনুচ্ছেদ রচনা উল্লেখ করা হলো।

করোনা ভাইরাস অনুচ্ছেদ রচনা

ভূমিকাঃ

করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণিকে বোঝায় যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেকসময় যা সাধারণ সর্দিকাশির ন্যায় মনে হয়, কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে, যেমন সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯।

অন্যান্য প্রজাতিতে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন মুরগির মধ্যে এটা ঊর্ধ্ব শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়, আবার গরু ও শূকরে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। করোনা ভাইরাস একটি দ্রুত সংক্রমণকারী ভাইরাস। বাতাসের মাধ্যমে এটি দ্রুত আক্রান্ত ব্যাক্তির হাচি কাশি থেকে ছড়িয়ে পড়ে। তাই করোনা ভাইরাস থেকে বেচে থাকলে আমাদের মাস্ক পরিধান করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা উচিৎ। এবং সেই সাথে যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন গ্রহণ করা উচিৎ।

ইতিহাসঃ

“করোনাভাইরাস” নামটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ করোনা থেকে যার অর্থ “মুকুট” বা “হার”। করোনা শব্দটি নিজে গ্রিক থেকে এসেছে যার অর্থ “মালা” বা “হার”। করোনাভাইরাস ১৯৩০-এর দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। প্রথমদিকে মুরগির মধ্যে সংক্রামক ভাইরাস হিসেবে এটি প্রথম দেখা যায়। পরে সাধারণ সর্দি-হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এরকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যে পাওয়া ভাইরাস দুটি ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ২২৯ই’ এবং ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ওসি৪৩’ নামে নামকরণ করা হয়।

তবে অনেকের সন্দেহ যে এই ভাইরাসটি চীন সরকার তার দেশের গরিব জনগনকে শেষ করে দেওয়ার জন্য নিজেরাই তৈরি করে নিজেরাই ছড়িয়ে ছিলো। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ভাইরাসটির আরো বেশ কিছু প্রজাতি পাওয়া যায় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৩ সালে ‘এসএআরএস-সিওভি’, ২০০৪ সালে ‘এইচসিওভি এনএল৬৩’, ২০০৫ সালে ‘এইচকেইউ১’, ২০১২ সালে ‘এমইআরএস-সিওভি’ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সাল চীনে এসএআরএস-সিওভি-২’ পাওয়া যায়(যা বর্তমানে সাধারণত নোভেল করোনাভাইরাস নামেই পরিচিত) এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ভাইরাসের ফলে শ্বাসযন্ত্রের (ফুসফুস) গুরুতর সংক্রমণ দেখা দেয়।

See: Game Khele Taka Income

করোনা ভাইরাসের ব্যাপকতা

শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মতো এই ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বরসহ হালকা লক্ষণ দেখা দিতে পারে । কিছু মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অর্গান বিপর্যয়ের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ মারাত্মক হয়। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যে কোন বয়সের মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। প্রধানত: আগে থেকে অসুস্থ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস মারাত্মক হতে পারে। তবে শহরাঞ্চলের দরিদ্র শিশুদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। এসব প্রভাবের মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয় বন্ধ থাকা।

কোভিড-১৯ এর সহ-রোগগুলির মধ্যে আমরা সবচেয়ে বেশী দেখতে পাই ডায়াবেটিস; এছাড়াও বিবিধ রোগের তালিকায় রয়েছে উচ্চরক্তচাপ এবং হৃদরোগ, কিডনীর রোগ, হাঁপানি এবং ক্যান্সার। আমাদের শরীর যখন কোন ভাইরাস হাইজ্যাক করে, তখন আমাদের দেহকোষ থেকে এক ধরণের রাসায়নিক নির্গত হয়, যার নাম ইন্টারফেরন্স। এই রাসায়নিক আসলে শরীরের অন্যান্য অংশ এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য একধরণের সতর্কবার্তা। কিন্তু করোনাভাইরাসের এক দারুণ ক্ষমতা আছে এই রাসায়নিক সতর্কবার্তাকে থামিয়ে দেয়ার। যার ফলে এই ভাইরাসটি আপনার শরিরে বাসা বাধলেও প্রাথমিকভাবে কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না বা কোণ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। সাধারণভাবে ধারণা করা হয় করোনা ভাইরাসের সুপ্তকাল ১৪ দিন। একটি সময় যখন ভাইরাসটি আপনার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে তখন বিভিন্ন সিমটম দেখা দিতে শুরু করে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক লক্ষণ

  • জ্বর
  • অবসাদ
  • শুষ্ক কাশি
  • বমি হওয়া
  • শ্বাসকষ্ট
  • গলা ব্যথা
  • মাথা ব্যথা
  • পেটের সমস্যা
  • মুখ ও নাকের স্বাদ হারিয়ে যাওয়া
  • পায়ের পাতায় র্যাস হওয়া
  • হঠাৎই অচেতন হয়ে পড়ে
  • শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে
  • কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত সকল উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর থাকেনা।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রামণ দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘২০১৯-এনসিওভি’ বা নোভেল করোনা ভাইরাস নামকরণ করে। নেকেই অনুমান করছেন নতুন এ প্রজাতিটি সাপ অথবা বাদুড় থেকে এসেছে যদিও অনেক গবেষক এ মতের বিরোধীতা করেন। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ৮ই মার্চ ২০২০ সালে। এর পর ১৯ মার্চ সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি অ্যামেরিকা প্রবাসী একজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন। কয়েক দিন পরে আরো একজন সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তি মারা যান, যিনি বিদেশি কারো সংস্পর্শে আসেননি বলে দাবি তার স্বজনদের। এভাবেই বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করে করোনা ভাইরাস এর প্রকোপ।

করোনাভাইরাসের শ্রেণিবিন্যাস

এ পর্যন্ত সারা বিশ্ব বেশ কয়েক ধরণের করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা গিয়েছে। যেই সব ভ্যারিয়েন্ট সারা বিশ্বে ব্যাপক সংক্রমণ ছড়িয়েছে সেইসব ভ্যারিয়েন্ট বা করোনা ভাইরাসের শ্রেণী বিভাগ নিম্নে দেয়া হলো।

  • আলফা করোনাভাইরাস – Alpha – B.1.1.7

উক্ত শ্রেণীর ভাইরাস প্রথমে যুক্ত্রাজ্যে শনাক্ত হয়। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট এর তুলনায় এই প্রজাতির করোনা ভাইরাস অনেক দ্রুত সংক্রমণ ঘটায়। তবে বর্তমানে অনুমোদিত টিকা এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।

  • বিটা করোনাভাইরাস – Beta – B.1.351

বিটা করনা ভাইরাস সর্বপ্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছিলো। ধারণা করা হয় এই প্রজাতির করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার বেশি। তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই প্রজাতির ভাইরাস গুরুতর অসুস্থ বা মৃত্যুর হার অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় কম।

  • গামা করোনাভাইরাস – Gamma – P.1

এই প্রজাতির করোনা ভাইরাস সর্বপ্রথম জাপান/ব্রাজিল এ শনাক্ত হয়েছিলো। অন্যান্য ভ্যারিয়ান্ট এর তুলনায় এর সংক্রমণের হার বেশি। তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই প্রজাতির ভাইরাস গুরুতর অসুস্থ বা মৃত্যুর হার অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় কম। বর্তমানে অনুমোদিত ভ্যাক্সিনগুলো এই ভ্যারিয়েন্ট এর বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম।

  • ডেল্টা করোনাভাইরাস – Delta – B.1.617.2

ডেল্টা প্রজাতির করোনা ভাইরাস প্রথমত ভারতে শনাক্ত করা হয়। ভারতে এই ভ্যারিয়েন্ট রাতারাতি ব্যাপক সংক্রমণ ঘটায়। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট এর তুলনায় এটি সর্বাধিক দ্রুত সংক্রমণ ঘটায়। এই ভ্যারিয়েন্ট এ আক্রান্ত ব্যাক্তি অনেক গুরুতর অবস্থায় যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

  • ল্যাম্বডা করোনাভাইরাস

ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট গুরুতর কিনা সে সম্পর্কে এখনো কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া এই ভ্যারিয়েন্ট ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ফাঁকি দিতে পারবে কিনা সেটির পক্ষেও কোন প্রমাণ মেলেনি।

করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এবং রোগের বিস্তার কমাতে করণীয়

  • নিয়োমিত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আপনার দুই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ( কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে) বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে আপনার হাত পরিষ্কার করুন। কারণ, সাবান জল দিয়ে বা অয়ালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার আপনার হাতের ভাইরাসকে মেরে ফেলে।
  • হাচি কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন। কাশি বা হাচি দিচ্ছে এমন ব্যাক্তির থেকে নিজেকে ১ মিটার কিংবা ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। কারণ যখন কেউ কেউ কাশি বা হাচি দেয় তখন তাদের নাক বা মুখ থেকে ছোট ছোট তরল ফোটা ছড়িয়ে পড়ে যার মধ্য ভাইরাস থাকতে পারে। যদি আপনি খুভ কাছাকাছি থাকেন, তবে আপনিও ঐ ব্যাক্তির থেকে কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হতে পারেন।
  • চোখ, নাক এবং মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন। কারণ হাত অনেক জিনিস স্পর্শ করে এবং তাতে ভাইরাস হাতে আসতে পারে।
  • নিশ্চিত হোন যে আপনি এবং আপনার আশে পাশের মানুষরা হাচি কাশি শিষ্টাচার মেনে চলছেন।
  • আপনার শরীর অসুস্থ লাগলে আপনি বাড়িতেই অবস্থান করুন। আপনার যদি সর্দি, জ্বর-কাশি হয় কিংবা শ্বাস নিতে সমস্যা হয় তাহলে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিনএবং আগে থেকেই যোগাযোগ করুন। স্থানীয় স্বাস্থ কর্তৃপক্ষের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।
  • সর্বশেষ কোভিড ১৯ সংক্রমণের হটস্পট গুলি সম্পর্কে সচেতন থাকুন। সম্ভব হলে ওইসব যায়গা থেকে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন।

উপসংহার

কোভিড ১৯ প্রাদুর্ভাব এর সবসময় সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে অবগত থাকুন। সচেতনতাই এখন একমাত্র উপায়। আমরা সকলেই নিয়োমিত মাস্ক পরিধান করবো। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করবো। স্বাস্থ বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলবো। যত দ্রুত সম্ভব নিজে ভ্যাক্সিন নেবো এবং পরিবারের সকলকে ভ্যাক্সিন নিতে আগ্রহী করে তুলবো। ভাইরাস কখনো শেষ হবার নয়, তাই বলে পৃথিবী থেমে থাকবে না। একটা সময় ভাইরাসকে সঙ্গি করেই আমাদেরকে বেচে থাকতে শিখতে হবে। তাই সকলে মিলে সুন্দর একটি প্রথিবী গড়ার প্রত্যয়ে স্বাস্থ সচেতনতা মেনে চলি।

এছাড়া দেখুনঃ

বিজয় দিবস অনুচ্চেদ রচনা

করোনা ভ্যাকসিন নিবন্ধনের নিয়ম এবং লিংক

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করোনা টিকা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া

Rate this post

2 thoughts on “করোনা ভাইরাস অনুচ্ছেদ রচনা”

Leave a Comment