১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। এ সিবসটি ঘিরে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয় নানা আয়োজন। ১৫ আগস্ট এক ভয়াল ইতিহাসের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো বাংলাদেশকে। ১৫ আগস্টের তাৎপর্য বর্নণা করতে গেলে শেষ হবে না। আমাদের আজকের পোস্টে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আমাদের পোস্ট থেকে আপনারা সহজেই এই শোকাবহ দিনটি সম্পর্কে জানতে পারবেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এর ঘটনাবলি – Incidents of 15 August, 1975

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এর ঘটনাবলি। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে সুদীর্ঘ কালের সামরিক শাসন কবলিত একটি দেশ পাকিস্তানের হাত থেকে ৯ মাসের একটি অসম যুদ্ধে জয়লাভ করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলাে স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র সাড়ে সাড়ে তিন বছরের মাথায় আবার সামরিক বাহিনী দেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলার সুযােগ পায়। তারা দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে দেশবাসীর আস্থা অর্জনের চেষ্টায় লিপ্ত না হয়ে বরং তারা দেশবাসীর ভাগ্য নিয়ে খেলা করার এক দুঃসাহস প্রদর্শন করে।

দেশের কতিপয় রাজনীতিবিদ তাদের এ ভ্রান্ত নীতির দ্বারা প্রভাবিত হন। ফলে দেশের জনগণের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্দশা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ে। এ সময়ে দেশে উপর্যুপরি সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে দেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। এ সময়ে সামরিক বাহিনী কর্তৃক ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বর তিনটি উল্লেখযােগ্য সামরিক হস্তক্ষেপ ঘটে যা দেশের রাজনীতির মােড় ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। নিম্নে এ সব সামরিক অভ্যুত্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলাে।

১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান- The 15 August Coup

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক হৃদয় বিদারক স্মরণীয় দিন। ঐদিন দেশে বিরাজমান হতাশাপূর্ণ অবস্থার সুযােগ নিয়ে সেনাবাহিনীর ২০-৩০ জন তরুণ অফিসারের নেতৃত্বে গােলন্দাজ এবং ট্যাঙ্ক বাহিনীর ১,৪০০ সৈন্যের সমর্থনে দেশে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। সামরিক বাহিনীর কতিপয় কর্মরত ও কর্মচ্যুত সদস্য এ অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত ছিল। লেঃ কর্ণেল ফারুক, লেঃ কর্ণেল খন্দকার আব্দুর রশীদ, মেজর ডালিম, মেজর নূর এই অভ্যুত্থানে প্রধান নেতৃত্ব দান করেন। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ মুজিবের বাড়ি আক্রমণ করে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। রক্ষীবাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতা এবং শেখ মুজিবের মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য খন্দকার মােশতাক আহমেদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেই জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে অভ্যুত্থানকারী সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে ‘সূর্য সৈনিক হিসেবে অভিহিত করেন। ঢাকার দূতাবাসের বরাত দিয়ে আমেরিকার স্বরাষ্ট্র দপ্তর সর্বপ্রথম এ খবর বহির্বিশ্বে প্রচার করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজয় বরণকারী পাকিস্তান সর্বপ্রথম মােশতাক সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং সাহায্য হিসেবে খাদ্যশস্য প্রেরণের কথা ঘােষণা করে। সৌদি আরব এবং চীন পরে এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।

শোকাবহ আগস্ট

বঙ্গবন্ধুর সরকারের পূর্বতন মন্ত্রিসভার ১৮ জন মন্ত্রির মধ্যে ১০ জন এবং ৯ জন প্রতিমন্ত্রীর ৮ জন মােশতাক সরকারে স্থান পায়। এ নেতাদের অনেককে জোর করে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তুলে নেয়া হয় পরবর্তীকালের অনেক গবেষণা তথ্যে তা প্রমাণিত হয়েছে। অনেক নেতাই সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে পরবর্তীতে আবার নিজ দলে ফিরে গেছেন। তবে এই সামরিক অভ্যুত্থান তেমন কোনাে বিরােধিতার সম্মুখীন হয়নি। প্রথম দিকে অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সেনা সদস্যরা সাজোয়া গাড়ি পরিবেষ্টিত বঙ্গভবনে মােশতাকের সাথে অবস্থান করতে থাকেন। এ সময়ে সবাই সমগ্র ঢাকা শহরে ব্যাপক তাণ্ডব সৃষ্টি করে। তারা দেশের সাধারণ মানুষের এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে যাতে কেউ তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে সাহস না করে।

শোকাহত আগষ্ট

প্রথমত তারা সবাই ভারতীয় আক্রমণের আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু ভারত সরকার প্রকাশ্যভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মন্তব্য প্রকাশ করতে বিরত থাকে। তবে ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় সপ্তাহে সেনাবাহিনীর মধ্যে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন  ঘটানাে হয়। মােশতাক সরকার কর্তৃক সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল কে. এম. শফিউল্লাকে চাকরি হতে অবসর প্রদান করা হয়। উপ-স্টাফপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মােঃ শফিউল্লার পরিবর্তে সেনাবাহিনীর স্টাফপ্রধান করা হয়। ৫ সদস্যবিশিষ্ট সামরিক অফিসারদের নিয়ে বিপ্লবী কাউন্সিল গঠিত হয়। এ কাউন্সিল প্রতিরক্ষা বিষয়ে জড়িত থাকে।

১৫ আগস্ট

খােন্দকার মােশতাক সরকার জেলা বিভক্তি এবং একদলীয় শাসন সংক্রান্ত পূর্ববর্তী বিষয়সমূহ অথ্যাৎ বাকশালের যে সব নীতি চালু করা হয়েছিল তা বাতিল ঘােষণা করে। পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী মন্ত্রীবর্গ, সংসদ-সদস্য, পদস্থ অফিসারগণকে আটক করা হয়। এ সময়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও তাদের ঘনিষ্ঠ জনেরা শাসকগােষ্ঠির হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে পালিয়ে যায়। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারী মােশতাক গংরা বুঝতে পারে যে, কেবল ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশের জনগণকে দীর্ঘ সময় পদানত করে রাখা যাবে না। তাই ৩ অক্টোবর (১৯৭৫) রাষ্ট্রপতি খন্দকার মােশতাক ঘঘাষণা করেন যে, সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরায় চালু করা হবে; ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট নাগাদ রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করার অনুমতি প্রদান করা হবে এবং ১৯৭৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন দেয়া হবে ।

শোকের মাস আগষ্ট

এই অভ্যুত্থানের ফলে দেশের অর্থনৈতিক জীবনে একটা স্বস্তি ফিরে আসে। ১৯৬৯-৭০ সালের তুলনায় ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসের দিকে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য শতকরা ৫০০ ভাগ বৃদ্ধি পায় কিন্তু সেপ্টেম্বরের দিকে তা শতকরা ৩০০ ভাগে নেমে আসে। পরে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য আরও ৩৭% হ্রাস পায়। ফলে জনগণ এই অভ্যুত্থানের প্রতি তেমন কোনাে উচ্চবাচ্য করা হতে বিরত থাকে। এই মূল্য হ্রাসের কারণ হিসেবে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহকে উল্লেখ করা যায়; যথা- ১. অধিক ফলন; ২. মুদ্রাস্ফীতি রােধ, ঋণ নিয়ন্ত্রণ, ১০০ টাকার নােট বাতিল; ৩. কতিপয় ভােগ্য পণ্যের উপর হতে শুল্ক কমানাে; ৪. সীমান্ত পাচার রােধ; ৫. বিদেশি সাহায্যের আশ্বাস । তাছাড়া সামরিক অভ্যুত্থান পরবর্তীকলে খন্দকার মােশতাক আহমেদ ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগানাের ফলে দেশের এক বিরাট সংখ্যক ধর্মীয় আলেম, ইসলামিমনা ব্যক্তিবর্গ তাকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করতে থাকে ।

দেখুনঃ জাতীয় শোক দিবসের কবিতা

৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থান- The 3 November Coup

৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থান১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা এবং ৩১ অক্টোবর চীনের স্বীকৃতি দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বামপন্থীদের মধ্যে আনন্দের সােত বয়ে যায়। প্রথমাবস্থায় তারা মনে করে মােশতাক সরকার তাদের আদর্শ অনুসরণ করবে। কিন্তু খুব শীঘ্রই তাদের এই ধারণা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়। বামপন্থিগণ বিশেষ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল মােশতাক মন্ত্রিসভায় পুরাতন মন্ত্রিপরিষদের কিছু কিছু সদস্য থাকায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে।

এমতাবস্থায় ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মােশাররফ আর একটি অভ্যুত্থান ঘটান। এই অভ্যুত্থান মুজিববাদী মস্কোপন্থীদের দ্বারা ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়। তারা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মােশাররফের বৃদ্ধা মাতার নেতৃত্বে ৪ নভেম্বর মুজিব স্মৃতি দিবস পালনের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর হতে মিছিলসহকারে শেখ মুজিবের বাসভবনে গমন করে। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মােশাররফ সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতা হতে অপসারণ করেন। তিনি ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের নায়কদের বিদেশে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন।

জাতীয় শোক দিবসের গুরুত্ব

এ দিকে ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রকারী সামরিক বাহিনীর সদস্যরা খালেদ মােশাররফের অজান্তে বাংলাদেশের ৪ জন জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং কামরুজ্জামানকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে। ৫ নভেম্বর খালেদ মােশাররফ খন্দকার মােশতাক আহমেদকে বিচারপতি সায়েমের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করেন।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে, খন্দকার মােশতাক তার নিজ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু যিনি তাকে সবেচেয়ে বিশ্বাস করতেন তাকে হত্যা করে তার নিজের ক্ষমতার লােভ চরিতার্থ করতে যে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছিলেন তাতে তিনি নিজেই ধরাশায়ী হন। মাত্র ৮৩ দিনের মাথায় তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তবে সেনাবাহিনীর কিছু উর্ধ্বতন অফিসারদের সমর্থন লাভ করলেও খালেদ মােশাররফ সাধারণ সৈন্যদের সমর্থন লাভ করতে ব্যর্থ হন। কার্যত তিনি সেনাবাহিনীকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন। তাছাড়া ৩ নভেম্বর হতে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত দেশ এক প্রকার সরকারবিহীন অবস্থায় চলতে থাকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী সম্পর্কে যাদের জানার আগ্রহ রয়েছে তাদের জন্য আমাদের পোস্টের এই অংশে বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা করে জীবনী উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী সম্পর্কে আমাদের পোস্ট থেকে আপনাদের যথেষ্ট ধারণা অর্জন হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা

ভূমিকা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার ইতিহাসে এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। ঔপনিবেশিক শাসন, শােষণ ও নিপীড়নের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে রক্ষা করতে তিনি দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছেন। সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। তাঁর এই অসাধারণ দেশপ্রেম ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দ্বারা তিনি সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর ও তৎকালীন তুখােড় ছাত্রনেতা তােফায়েল আহমেদ তাই অকৃত্রিম ভালােবাসা ও কৃতজ্ঞতায় ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁকে বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। বাঙালি জাতি যুগ যুগ ধরে তাকে স্মরণ করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম ও পরিচয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গােপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। দুই ভাই ও চার বােনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। তাঁর বড় বােন ফাতেমা বেগম, মেজ বােন আছিয়া বেগম, সেজ বােন হেলেন ও ছােট বােন লাইলী। তার ছােট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের। ছােটবেলায় বঙ্গবন্ধুকে আদর করে খােকা নামে ডাকা হতাে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বাল্যকাল

কিশাের বঙ্গবন্ধু ছােটবেলা থেকেই ছিলেন জনদরদি। ছােটবেলা থেকেই তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সমান চোখে দেখতেন। একবার স্কুল থেকে ফেরার সময় এক গরিব বন্ধুকে নিজের ছাতা দিয়ে তিনি নিজে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়িতে ফেরেন। পারিবারিক আনন্দঘন পরিবেশে গােপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তার বাল্যকাল কেটেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শিক্ষাজীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক পাঠ শেষ করেন গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুল থেকে। নয় বছর বয়স তথা ১৯২৯ সালে তিনি গােপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশােনা করেন। এরপর তিনি গােপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং এ স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে আইনে পড়ার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনীতি সচেতনতা

শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তিনি জেলে যান। তার স্কুলের ছাত্রাবাস ছিল জরাজীর্ণ। তাই ছাত্রাবাস মেরামতের জন্য অর্থের প্রয়ােজন ছিল। এই অর্থের জন্য তিনি শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক ও হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর পথরােধ করে দাড়িয়ে ছিলেন। কিশাের শেখ মুজিবুর রহমানের সাহস দেখে শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক বিস্মিত হয়েছিলেন এবং ছাত্রাবাস মেরামত করার জন্য অর্থের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জনদরদি

বাল্যকাল থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান দরিদ্র মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। কেননা, একবার তিনি নিজের বাড়ির গােলার ধান গরিব চাষিদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। তার পিতা এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, এবার চাষিদের জমির ধান বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। আকালে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। আমাদের মতাে তাদের পেটেও ক্ষুধা আছে। তারাও আমাদের মতাে বাঁচতে চায়। এভাবেই শেখ মুজিবুর রহমান বাল্যকাল থেকেই জনদরদি হয়ে ওঠেন।

বঙ্গবন্ধুর সংসারজীবন

১৯৩৮ সালে আঠারাে বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফজিলাতুন্নেছার বিয়ে হয়। এই দম্পতি দুই কন্যা ও তিন পুত্রের জন্ম দেন। কন্যারা হলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। আর পুত্রদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। তিন পুত্র ও স্ত্রীসহ বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে উচ্চাভিলাসী কিছু সেনাসদস্যের হাতে নিহত হন।

শেষ কথাঃ 
আশা করি আমাদের আজকের পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ১৫ই আগস্ট সম্পর্কে সঠিক ইতিহাসটি জানতে আমাদের পোস্টটি ফলো করুন। আমরা চেস্টা করেছি সকল তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করার জন্য। পোস্ট সম্পর্কে আপনাদের কোন মতামত থাকলে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

দেখুনঃ

বিজয় দিবস অনুচ্চেদ রচনা

জাতীয় শোক দিবস অনুচ্ছেদ রচনা

জাতীয় শোক দিবসের বক্তব্য

১৫ আগস্ট নিয়ে কবিতা

Rate this post

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top