একুশে ফেব্রুয়ারি অনুচ্ছেদ রচনা- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুচ্ছেদ রচনা 

21 february essay

একুশে ফেব্রুয়ারি অনুচ্ছেদ রচনা 
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুচ্ছেদ রচনা

অথবা, জাতীয় জীবনে একুশের চেতনা
অথবা, একুশের চেতনা ও বাংলাদেশ
অথবা, শহিদ দিবস ও একুশের চেতনা

ভূমিকা :
বাঙালির ইতিহাস সরলরৈখিক না হলেও তাদের ইতিহাসে অসংখ্য উজ্জ্বল বাকচিহ্ন আছে যা অর্জনের সমৃদ্ধতায় সমুজ্জ্বল। এমনি একটি বাঁকচিহ্ন নিঃসন্দেহে ১৭ নভেম্বর, ১৯৯৯। ইউনেস্কোর সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারির স্বীকৃতি বাঙালির জন্য এ উজ্জ্বল বাকচিহ্নের সূচক। বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের গর্ব ও অহঙ্কার বাংলাভাষা ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ অব দি ওয়ার্ল্ড’ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেলাে। বিশ্বের মানুষ এখন থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙালি জাতির মাতৃভাষা ভালােবাসার গাঁথা শুনবে এবং নিজেরাও উদ্বুদ্ধ হবে এবং একই সঙ্গে ছােট-বড় সকল জাতি-গােষ্ঠীর মাতৃভাষাই মর্যাদার সঙ্গে সহাবস্থান করবে।

ভাষা আন্দোলনের আদি কথা :
পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যবহিত পূর্বে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। পূর্ববঙ্গ থেকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রস্তাবের ঘাের বিরােধিতা করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন (১১ শ্রাবণ, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ)। এভাবে পাকিস্তান জন্মের আগেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

বিশ্ব সভায় বাংলাদেশের ও বাঙালি জাতির মহা বিজয় :
‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘােষণা বিশ শতকের অন্যতম প্রধান ঘটনা। যা ছিল এতদিন বাংলাদেশের জাতির ইতিহাসের অন্যতম মাইলফলক, আজ তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে স্মরণীয় পালনীয় একটি দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করাতে দলমত নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশী নাগরিক গর্বিত ও আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষ নানাভাবে নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্মরণ করবে আমাদের এ যুগান্তকারী অর্জনকে। বাঙালি জাতির রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলন একুশে ফেব্রুয়ারি আজ ইতিহাসের গণ্ডী অতিক্রম করে সমগ্র বিশ্বের সম্পদে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি অনন্য অর্জন। আন্ত র্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সারা বিশ্বের মানুষের জন্য এক ধরনের প্রতীকী আত্মপ্রসাদের জন্ম দিয়েছে। বাঙালির আত্মপ্রসাদের মূর্ত রূপ হলাে বাংলা একাডেমি। কারণ অমর একুশের ভাষা শহীদদের রক্তের শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এ প্রতিষ্ঠান।

ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু মাতৃভাষার জন্য আমাদের সংগ্রাম এবং আত্মদানকেই স্বীকৃতি দেয় নি, অমর একুশের শহীদদের আত্মদান থেকে উৎসারিত স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনকেও মর্যাদা দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর বাংলাদেশের শহীদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হবে তখন আমাদের বুক এক অনাবিল আনন্দ ও অতুলনীয় গর্ববােধে ভরে ওঠবে। মহান মে দিবস যেমন এখন শুধু শিকাগাে শহরেই সীমাবদ্ধ থাকছে না পৃথিবীর সকল দেশেই তা পালিত হচ্ছে, তেমনি একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল ঢাকার শহীদ মিনারে নয়; বরং পৃথিবী জুড়ে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হবে। সেসব দেশের জনগণ নতুন করে জানতে পারবে কীভাবে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার নিজেদের অমূল্য প্রাণের বিনিময়ে মাতৃভাষাকে রক্ষা করেছেন।

মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র :
ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তানি আমল পর্যন্ত মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পূর্ব থেকেই বাংলা ভাষাকে লড়াইয়ে নামতে হয় উর্দুর প্রতিপক্ষ হিসেবে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বেই রাষ্ট্রভাষা বিতর্কে উর্দুর দাবিদারদের বিপরীতে যারা বাংলা ভাষার স্বপক্ষে কলম যুদ্ধের সূচনা করেন, তাদের মধ্যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পরই উল্লেখ করতে হয় কবি ফররুখ আহমদ ও প্রাবন্ধিক আবদুল হকের নাম। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ দৈনিক আজাদে এক প্রবন্ধে বলেন, “অধিকাংশ জনসংখ্যার ভাষা হিসেবে বাংলাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত, যদি দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা গ্রহণ করার প্রয়ােজন হয় তখন উর্দুর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।” কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন উচ্চমহল, শাসক এবং প্রশাসক যারা মােহাজের হয়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এসেছিলেন তারাই উর্দুকে অন্যান্য মাতৃভাষার ওপর চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করতে থাকলেন। পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলে তা মেনে নিলেও বাংলা ভাষা তার সেই প্রাচীন সংগ্রামী ঐতিহ্যের কারণেই মেনে নিল না। পৃথিবীর মাতৃভাষাগুলাের মধ্যে বাংলা ভাষা সম্ভবত একমাত্র ব্যতিক্রম যে, এ ভাষাটিকেই তার প্রাচীনরূপ থেকেই মর্যাদা ও অধিকারের প্রশ্নে লড়াই করে আসতে হয়েছে। বাংলার প্রাচীনকালে সেন শাসনামলে বাংলা ভাষার চর্চার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে বলা হয়েছিল, বাংলা ভাষার চর্চা করলে রৌরব নামক নরকে যাবে।

জাতিসংঘ থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা ও স্বীকৃতি :
মাতৃভাষার জন্য বাঙালি জাতির আত্মদান বৃথা যায় নি, ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে তা আরাে ভাস্বর হয়ে ওঠেছে। ইউনেস্কো কর্তৃক এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্বের আড়াই হাজারের ওপর ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ স্বীকৃতি যে শুধু ভাষার স্বীকৃতি নয়; বরং আরাে ব্যাপক স্বীকৃতির দ্যোতক। অমর একুশের মধ্যে নিহিত বাঙালির ভাষাভিত্তিক স্বাতন্ত্রের বীজ। সুতরাং অমর একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাঙালির প্রতীকী বিজয় নির্দেশিত হয়েছে। ভাষা শহীদদের আত্মদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে। একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা এখন শুধু মাতৃভাষার পরিধি অতিক্রম করে সকল পর্যায়ে মানবাধিকার বাস্তবায়ন করার একটি শক্তিশালী মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। মাতৃভাষা আন্দোলনের এ চেতনা থেকেই আমরা যেকোনাে অবিচার ও মানবাধিকার লঙ্নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার উদ্দীপনা পেয়েছি।

উপসংহার :
বিদায়ী সহস্রাব্দ শেষ হবার আগেই আমাদের মাতৃভাষার দাবিতে আত্মহুতি দানকারী শহিদদের মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। অবশ্য এর আগে এমন অনেক আত্মত্যাগের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে। কারণ সেগুলাে ছিল উন্নত দেশগুলাের ঘটনা। আর মাতৃভাষার জন্য আমাদের সংগ্রাম ও ত্যাগের স্বীকৃতি মিলতে মিলতে পার হয়ে গেল ৪৮ বছরেরও বেশি সময় । যাই হােক তবুও আমরা তা পেয়েছি। সর্বোচ্চ অঙ্গীকার ও নিরলস সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করেছি, স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং সর্বশেষে আমরা আমাদের মাতৃভাষা ও তার জন্য যে আত্মােৎসর্গ তার স্বীকৃতি পেয়েছি।

দেখুনঃ

বিজয় দিবস অনুচ্চেদ রচনা

স্বাধীনতা দিবস অনুচ্ছেদ রচনা

বঙ্গবন্ধুর জীবনী অনুচ্ছেদ রচনা | ছোটদের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা

ভাষা আন্দোলনের শহীদদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা, স্ট্যাটাস, ছন্দ, ছবি এবং ক্যাপশন

অমর একুশে
একুশে ফেব্রুয়ারি

ভূমিকা :
মা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষা প্রতিটি মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গের অসংখ্য উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে । কিন্তু বাঙালি জাতি পৃথিবীর বুকে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ১৮৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষার জন্য জীবন বিসর্জন দিয়ে । এদিন আমরা ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে সমস্বরে গেয়ে উঠি –

‘আমার ভাইয়ে রক্তে রাঙানাে একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি”

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি :
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত-পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় । পাকিস্তানের আবার দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝখানে বিশাল ভারতবর্ষ । দূরত্ব প্রায় আড়াই হাজার মাইল । দুই অঞ্চলের ভাষা-সংস্কৃতি সম্পূর্ণ আলাদা। তদুপরি পশ্চিম পাকিস্তানিরা শাসকের ভূমিকা পালন করে আর পূর্ব পাকিস্তান হয়ে যায় শাসিত জনগােষ্ঠী । শতকরা ৫৬ জনের মুখের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘােষণা করে। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- শিক্ষক রাষ্ট্র ভাষাকে বাংলা করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ১৯৪৮ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট হয়। তারপর ১১ই মার্চ থেকে ১৫ই মার্চ ছাত্র সমাজ লাগাতার সংগ্রাম চালিয়ে যায়। ফলে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ছাত্রদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং বাঙালিদের ভাষার দাবিটি মেনে নেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিহাসের বিষয় হলাে এই যে পরবর্তীতে খাজা নাজিমউদ্দিন নিজেই এই বিষয়ের বিরােধিতা করেন।

১৯৪৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক সভায় ঘােষণা করেন। “Urdu and Urdu shall be the state language of Pakistan”। কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা না না শব্দে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ধীরে ধীরে এদেশের প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, কবি-সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দীন পল্টনের এক জনসভায় মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর বক্তব্যকে পুনরাবৃত্তি করে বলেন, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এ ঘােষণার প্রতিবাদে ৪ই ফেব্রুয়ারি ছাত্র ধর্মঘট, ১১ই ফেব্রুয়ারি প্রস্তুতি দিবস এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সারা পূর্ব পাকিস্তান ধর্মঘটের ডাক দেয়। এই ধর্মঘটকে বানচাল করার জন্য শাকসগােষ্ঠী ২০শে ফেব্রুয়ারির বিকেলে ১৪৪ ধারা জারি করেন। ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমবেত হয়। তারা মাতৃভাষার দাবিতে মিছিল বের করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই শ্লোগানে মুখর হয়ে পড়ে চারপাশ । এ মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। ফলে শহিদ হন রফিক, শফিক, সালাম, বরকতসহ নাম না জানা আরও অনেকে। তাই ১৯৫৬ সালে শাসকগােষ্ঠী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করে।

বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ :
একুশে ফেব্রুয়ারিকে মনে করা হয় বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। কেননা, পরবর্তী সকল আন্দোলনের প্রেরণা যােগায় এ আন্দোলন। ‘৬৬-এর ছয় দফা, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০-এর নির্বাচন সর্বোপরি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয় ভাষা আন্দোলনের প্রেরণার পথ ধরে ।

বাঙালি জাতির স্বকীয়তা :
বাঙালি জাতি ভাষা-সংস্কৃতি সবকিছু মিলিয়ে একটি স্বকীয় ও ঐক্যবদ্ধ জাতি তা প্রমাণিত হয় ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে । যা বাঙালি জাতিকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।

জাতিসত্তার মূল্যায়ন :
বাঙালি জাতীয়তাবােধের উন্মেষ ঘটেছিল ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। পৃথক জাতি হিসেবে নিজের আত্মপরিচয়কে গৌরবময় করে তুলেছিল এ মহান আন্দোলনের মাধ্যমে।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি :
ভাষা আন্দোলন শুধু বাঙালি জাতিকে আন্দোলিত করেনি, সমগ্র জাতিকে আন্দোলিত করেছে। এ পরিচয় পাওয়া এ দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘােষণা করে। ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে একযােগে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে দিনটি।

প্রেরণার উৎস :
একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বাঙালি জাতির জন্য প্রেরণার উৎস নয় । সকল ভাষার সকল মানুষের জন্য প্রেরণার উৎস। নিজের ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার মানসিকতা তৈরি এ আন্দোলন থেকে ।

উপসংহার :
বাঙালিরা নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার যে মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা চিরদিন মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে । আর সকল সাহসী আন্দোলনে মানুষকে প্রেরণা যােগাবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
জাতীয় জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব

ভূমিকা :

“আবার ফুটেছে দেখ কৃষ্ণচূড়া/থরে থরে শহরের পথে
কেবল নিবিড় হয়ে কখনওবা/একা হেঁটে যেতে মনে হয়, ফুল নয় ওরা,
শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ/স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।
একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রঙ।” —শামসুর রাহমান

বাইসনের সেই গুহা থেকে মানুষ যেদিন বেরিয়ে এলাে, দেখল নতুন পৃথিবী-আবিষ্কার করল নিজেকে আলাদাভাবে। সেদিন বুঝতে পারেনি তারাও এ পৃথিবীতে শিল্পের উন্মেষ ঘটাবে। আর জীবনের প্রয়ােজনেই তারা গুহাতে এঁকেছিল শিকারের অসংখ্য কৌশল। তারপর এ মানুষই বিপদসঙ্কুল জীবনযাত্রাকে আরাে সহজসাধ্য করার তাগিদ অনুভব করল। আবিষ্কৃত হলাে লেখার হরফ। সেই হায়ারােগ্লিফিকের যুগ থেকে অক্ষর এখন মুক্তবিহঙ্গ। পরিশেষে সৃষ্টি হলাে ভাষা। অঞ্চলভেদে এর পার্থক্য ক্রমে বাড়তে লাগল। তারপর গড়িয়ে গেল হাজার হাজার বছর। এভাবে নানা পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হলাে আমাদের বাংলা ভাষা। এ ভাষা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত।

একুশের স্বরূপ :
একটি ভাষা থেকে উৎপত্তি হলাে বাঙালি জাতির। যে জাতির রয়েছে হাজার বছরের বীরত্বগাথা। এ জাতি বীরের জাতি। যে জাতির অন্যতম সৃষ্টি মহান একুশ। একুশ— একটি চেতনা, একটি বৈশ্বিক প্রতীক, এক মহাবিস্ফোরণ। একুশ হলাে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এবং বিভিন্ন জাতি ও ভাষাগােষ্ঠীর হিরন্ময় প্রতীক।

ভাষা-আন্দোলনের সূচনা :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বাধীনতার প্রস্তাব নিয়ে ভারতে তাকে ক্যাবিনেট মিশন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠারও অনেক আগে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর জিয়াউদ্দিন উর্দুত্ব পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেন। কিন্তু পূর্ব বাংলা থেকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রস্তাবের বিরােধিতা করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন। এভাবেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই রাষ্ট্রভাষার বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।

ভাষা-আন্দোলন :
জনগণের ভাষার অধিকার দীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ব হয়েছে। এর সংক্ষিপ্ত চিত্র নিম্নরূপ:

  • ১৯৪৭-এর জুলাই মাসে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রথম বক্তব্য রাখেন।
  • ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদের আইনবিধি সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে ইংরেজি ভাষার সাথে “উর্দু ভাষার নাম সংযুক্তির চেষ্টা করা হলে বাঙালি সংসদ সদস্য শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তার সাথে বাংলা সংযুক্তির দাবি জানালে পাকিস্তানে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয় ।
  • ১১-১৫ মার্চ পর্যন্ত (১৯৪৮) ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তােলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। কিন্তু ২১ মার্চ ১৯৪৮  পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ‘ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বলেন, But let me make it very clear to you that the State Language of Pakistan is going to be Urdu and no other language. Any one who tries to mislead you is really the enemy of Pakistan.
  • ২৬ জানুয়ারি ১৯৫২ সালে গভর্নর জেনারেলের মদদপুষ্ট হয়ে মুসলিম লীগের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন
  • পুনরায় বলেন, “উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।” শুরু হয় চূড়ান্ত ভাষা বিদ্রোহ।
  • ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীন নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি চালায়। নিহত হয় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরাে অনেকে। অবশেষে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
  • ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মাহুতির ফলেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাই আজ আমরা পেয়েছি সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বাংলা ভাষা ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। এক হিসাবে জানা যায়, পৃথিবীতে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি। ভারতবর্ষের প্রায় ১৭শ’ ভাষাভাষী জনগােষ্ঠীর মধ্যে বাংলা ভাষাভাষীদের অবস্থান আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। কেননা আমাদের আছে নিজস্ব রাষ্ট্র।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস :
বাংলা ভাষা আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার মানুষদের নিজ ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমােদিত হয়। ইউনেস্কোর ঘােষণায় বলা হয়, 21st February is proclaimed International Mother Language Day throughout the world to commemorate the martyrs who sacrificed their lives on this day in 1952.

২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্য দেশসমূহে একযােগে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে একটি প্রস্তাব পাশ হয়। যেখানে বলা হয়- “এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ।”

যে দুই জন বাঙালি ভিনদেশি মাটিতে অবস্থান করে মাতৃভাষার এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে প্রথম উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন তাদের নাম রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে ৫২-র ভাষা-আন্দোলনে নিহত সংশপ্তকদের নামের সাথে এদের আশ্চর্যরকম মিল। আর এভাবেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বহু বিবর্তনের মাধ্যমে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ সত্যিই অমরত্ব লাভ করেছে। আমরা গর্ব করি ৫২ সালের শহিদদের নিয়ে। এর পাশাপাশি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে যাদের অবদান রয়েছে তাদের।

বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা :
বাংলা ভাষার প্রতি অনেক আগে থেকেই অবহেলা চলে আসছে। দেশের বৃহত্তর জনসংখ্যার মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাকে অবহেলা করে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলার সচেতন মানুষ এ ঘােষণা মেনে নিতে পারেনি। তাদের সােচ্চার প্রতিবাদী কণ্ঠে সারা বাংলা জেগে ওঠে।

বাংলা ভাষার আন্দোলন :
মূলত ১৯৪৮ সাল থেকেই বাংলা ভাষার আন্দোলন শুরু হয়। ধীরে ধীরে এ আন্দোলন সারা বাংলাদেশে তথা পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্ররা এ আন্দোলনের সূত্রপাত করলেও ধীরে ধীরে সমস্ত জনগণ এটাতে জড়িয়ে পড়ে এবং এই আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। সরকার যতই ভাষা-আন্দোলনের ওপর দমননীতি চালায়, ততই আন্দোলন প্রবল হতে থাকে।

একুশে ফেব্রুয়ারি :
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ধর্মঘট আহবান করা হয়। ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমিতি ও মিছিল নিষিদ্ধ করে স্বৈরাচারী সরকার। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিছিল বের করে। তারা সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকার তাদের প্রতিহত করার জন্য মেডিকেল কলেজের সামনে মিছিলে বেপরােয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। আর এর ফলে সালাম, রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারসহ আরাে অনেক ছাত্র প্রাণ হারায়; যা পরবর্তীকালে বাঙালির নবজাগরণকে আরাে বেগবান ও কার্যকর করে।

রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি :
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির জঘন্য হত্যাকাণ্ডের খবর দ্রুত সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ খবরে সারা দেশের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এরই ফলে পাকিস্তানি সরকার ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকে স্বীকৃতি দেয়।

শহিদ মিনার :
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষা অর্জনের ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি শহিদ মিনার। শহিদ মিনার ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ। ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শহিদ শফিউর রহমানের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে ১০ ফুট উচ্চতা ও ৬

শহিদ দিবস:
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির বর্বর হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি স্মরণ করার জন্য প্রতিবছর ভাবগম্ভীর পরিবেশে শহিদ দিবস পালন করা হয়। কিন্তু শুধু শহিদ দিবস পালনের মধ্যেই একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য সীমাবদ্ধ থাকে না। তা বাঙালি জাতির জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে।

পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ :
বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি এই নির্মম হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে সুদূরপ্রসারী এক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের মানুষ এইটনার পর থেকে নিজের ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে শেখে এবং অধিকার আদায়ের জন্য তৎপর হতে শেখে। ৫২- এর ভাষা-আন্দোলনের পথ ধরেই ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে আমাদের নিরঙ্কুশ বিজয়, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হয়। আজ আমরা যে স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করছি তার পেছনে রয়েছে ভাষা আন্দোলনের চেতনা।

একুশের প্রভাব :
বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রেই একুশের প্রভাব লক্ষ করা যায়। একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগ ফুট চওড়া শহিদ মিনারের উদ্বোধন করেন। জাতির জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। করছি, তার পেছনে রয়েছে ভাষা-আন্দোলনের চেতনা। থেকে আমরা যে চেতনা লাভ করেছি, তা পরবর্তীতে সকল আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। একুশের ঘটনাকে কেন্দ্র। করে সমগ্র জাতি একতাবদ্ধ হতে শিখেছে। তাদের ভিতরে দেশপ্রেমের উন্মেষ ঘটেছে একুশের পর থেকে। একুশের চেতনা থেকে অত্যাচার শােষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার শক্তি ও প্রেরণা লাভ করেছে গোটা জাতি।

বর্তমানের একুশ :
প্রতিবছর অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়। নতুন নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে জাতীয় জীবনে দেখা দেয় একুশে ফেব্রুয়ারি। এখন সারা বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে শহিদ মিনার তৈরি হয়েছে। আগের চেয়ে মানুষ এখন একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বেশি সচেতন হয়েছে। বর্তমানে একুশ নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান, আলােচনা সভা আয়োজন করা হয়ে থাকে।

একুশের চেতনা :
এই মহান একুশের আছে এক অবিনাশী চেতনা। এই একুশে ফেব্রুয়ারির মধ্য দিয়েই আমরা আপন সত্তা আবিষ্কার করতে পেরেছি। আমরা এর মাধ্যমে আরাে পেয়েছি স্বাধিকার অর্জনের প্রেরণা। কিন্তু এই প্রেরণাকে ও চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য সাম্প্রদায়িক শাসকগােষ্ঠী ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এরই ফলে অনেক শহিদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়। এত কিছুর পরেও কেউ এই একুশের চেতনাকে ধ্বংস করতে পারে নি। বাঙালি জাতির মনের ভিতরে এই চেতনা গ্রথিত আছে।

সাহিত্যক্ষেত্রে একুশের অবদান :
একুশ শুধু আমাদের অধিকার সচেতন করে তােলেনি, এর পাশাপাশি আমাদের সাহিত্য ক্ষেত্রেও অনেক অবদান রেখেছে। আমাদের জাতীয় চেতনার প্রতিফলন সাহিত্যক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায়। আমাদের কথাসাহিত্য, নাটক, ছােটগল্পে, কবিতায় ও সংগীতে একুশের চেতনাকে তুলে ধরা হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলার দামাল ছেলেরা জীবন দিয়ে যে প্রতিবাদ শুরু করেছিল, সেটা সাহিত্যের মাধ্যমে সক্রিয় করে রেখেছিল সাহিত্যিকরা। এই সাহিত্যিকদের মধ্যে আছেন সিকানদার আবু জাফর, মুনীর চৌধুরী, মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আবুল ফজল, শামসুর রাহমান কবি-সাহিত্যিক। তেমনই কয়েকটি সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে শহিদ স্মরণে, স্বাধীনতা তুমি, একুশে ফেব্রুয়ারি, সংগ্রাম চলবেই, মাতৃভাষা ও বাঙালি মুসলমান এসব সাহিত্য বাংলার মানুষকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।

মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা :
ইউনেস্কো ২০০০ সাল থেকে বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই প্রেক্ষিতে সদস্য দেশগুলাের কাছে তারিখ নির্ণয়ের সুপারিশ চাওয়া হয়। বাংলাদেশও দিবসটি পালনের জন্য একুশে ফেব্রুয়ারির গৌরবগাথা বা তাৎপর্য তুলে ধরে। মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, একমাত্র বাঙালিরা। তাই ইউনেস্কো এই আত্মত্যাগের বিষয়টিকে সম্মান জানিয়েই একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘােষণা করায় বাঙালির আনন্দ উৎসব :
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরে বাংলার মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। এ জন্য ১৯৯৯ সালের ৭ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় উৎসবের আয়ােজন করে। পরবর্তীকালে ২০১০ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে উৎসবের আয়ােজন করা হয়। তাছাড়া আনন্দ শােভাযাত্রা-মিছিল, সভা-সমাবেশ, নাচ-গান প্রভৃতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন ও বাংলাদেশের গুরুত্ব : এখন শুধু আমরা বাঙালিরা শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে সম্মান জানানাের জন্য শহিদ মিনারে যাই না। এখন পুরাে বিশ্বের মানুষ বিভিন্ন স্তরের মানুষ শহিদ মিনারে ছুটে যায় শহিদদের সম্মান জানানাের জন্য। আমরা বাঙালিরাই একমাত্র জাতি, যারা মাতৃভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি মাতৃভাষা রক্ষার প্রতীক হয়ে রয়েছে। বিশ্ববাসী এখন বাংলাদেশকে শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে আমাদের মাতৃভাষাপ্রীতির কারণে।

উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায়, একুশ আজ বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এ দুর্লভ অর্জন যেমন আনন্দের, তেমনই এ দিবসের দর্শন তথা মর্মবাণী বা চেতনা বাস্তবায়নে আমাদের এখনও অনেক কর্তব্য রয়েছে। এতে শুধু আত্মতৃপ্তির অবকাশ নেই। আমাদেরও উদ্যোগ নিতে হবে আমাদের প্রাণপ্রিয় ভাষা, সংস্কৃতিকে রক্ষা ও সমৃদ্ধ করার জন্য। সর্বস্তরে বাংলা শুদ্ধভাবে এখনও প্রচলন হয় নি। এটিকে কেবল জাতীয় পর্যায়েই নয় আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও নজর দেওয়া প্রয়ােজন। তাহলেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারির সেই আত্মত্যাগ সার্থক হবে।

শেষ কথাঃ অনুচ্ছেদ/রচনা ৩ টি বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই হতে সংগৃহীত। বানান ভূল হলে আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Rate this post

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top