স্বাধীনতা দিবস অনুচ্ছেদ রচনা।২৬শে মার্চ অনুচ্ছেদ রচনা

independence day essay

স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা

২৬এ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালাে রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এদেশের হাজার হাজার অসহায় বাঙালির নিধনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৬এ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করা হয়। বীর বাঙ্গালী শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকে প্রস্তুতি চলে। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, দিবসটি উদ্যাপনের জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। সারাদেশে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। শহরের স্টেডিয়ামগুলােতে বয়স্কাউট, গার্লস গাইড ও কচি-কাঁচাদের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। রেডিও, টেলিভিশনে দেশরক্ষা বাহিনী এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কুচকাওয়াজ প্রদর্শিত হয়। আলােচনা অনুষ্ঠান ও দেশাত্মবােধক গান পরিবেশিত হয়।

স্বাধীনতা দিবস অনুচ্ছেদ রচনা -১

ভূমিকা :
স্বাধীনতা যেকোনাে মানুষের জন্য পরম পাওয়া । সাধারণত পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে হয় । ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তে আর অসংখ্য মা-বােনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তাই ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসটি জাতির জন্য এক গৌরবময় অধ্যায়। আমাদের প্রত্যাশিত স্বাধীনতা দিবস : বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। তাই এ দিনটি আমাদের জন্য গুরুত্ব বহন করে। আবার এ স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে রয়েছে এক বিস্তৃত ঐতিহাসিক পটভূমি ।ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট :

দ্বিজাতি তত্ত্বে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্র জন্ম নেয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান নামক দুটো প্রদেশের সমন্বয়ে গঠিত হলেও শুরু থেকে বরাবরই নানা চক্রান্তে পূর্বপাকিস্তান বা বাংলাদেশকে সর্বক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থ-সম্পদ সর্বত্রই সীমাহীন বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ ধরনের বৈষম্য আর চক্রান্তের নগ্ন প্রকাশ দেখা যায় বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা ভাষার স্থলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ন্যাক্কারজনক ষড়যন্ত্র থেকে।

কিন্তু পূর্ববাংলার ছাত্রজনতা এ চক্রান্তের বিরুদ্ধে সােচ্চার হয় এবং বাংলা ভাষার মর্যাদার দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তােলে। আর ১৯৫২ সালে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা আরও অনেক শহিদের রক্তে স্নাত হয়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় । কিন্তু এ স্বীকৃতির নেপথ্যে তাদের গভীর ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। তাই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই সংঘটিত হয় ৬২-শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-র ছয় দফা এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান । অতঃপর ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃপ্ত কণ্ঠে ঘােষণা করলেন,

—’এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।

বস্তুত বঙ্গবন্ধুর এ ঘােষণার মধ্য দিয়ে বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রাণপনে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যায় ।

মুক্তিযুদ্ধের অর্জন :

বাঙালির স্বপ্ন-সাধ ও অস্তিত্বকে চিরতরে ধ্বংস করার গভীর চক্রান্তে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের উপর চালায় শতাব্দীর সবচেয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। হাজার হাজার ঘুমন্ত নারী-পুরুষ আর শিশুকে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবীসহ রাজারবাগ পুলিশ লাইনের নিরস্ত্র বাঙালি পুলিশ আর ইপিআর সৈন্যকে হত্যা করে। গ্রেফতার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তবে গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে তিনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়ারলেসের মাধ্যমে সকলকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। অবশেষে দীর্ঘ নয়মাসে ত্রিশ লক্ষ শহিদের আত্মদান আর অসংখ্য মা-বােনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।

স্বাধীনতার পাওয়া না পাওয়া :

এখনও স্বাধীনতার প্রত্যাশিত প্রাপ্তি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত এবং সম্প্রদায় নিরপেক্ষ বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে সীমাহীন দুর্নীতি স্বাধীনতার প্রকৃত তাৎপর্যকে ম্লান করেছে। তবুও স্বাধীনতার বীজমন্ত্রে আমরা উদ্বুদ্ধ হয়ে সােনার বাংলা গড়তে চাই ।

উপসংহার :

স্বাধীনতার মূল তাৎপর্যকে তুলে ধরতেই স্বাধীনতা দিবসের এতাে আয়ােজন। এ দিবসের চেতনা আর মাহাত্ম আমাদেরকে গভীরভাবে আলােড়িত করে। দিবসটি আমাদের একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায় ।
আরো দেখুনঃ

স্বাধীনতা দিবস অনুচ্ছেদ রচনা – ২

স্বাধীনতা দিবস সূচনা :
স্বাধীনতা মানুষের পরম আকাঙিক্ষত ধন। পরাধীনভাবে বেঁচে থাকায় কোনাে গৌরব নেই। কত দেশের মানুষ তাই যুগে যুগে এই স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন দিয়ে গেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্ভব রক্তঝরা ইতিহাসের সাক্ষী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। স্বাধীন বাংলাদেশ আমাদের অহংকার, আমাদের প্রত্যয়।

২৬ মার্চের পটভূমি :
২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবসটি যেমন গৌরবের তেমনি দুঃখের। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা যেভাবে এদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদলিত করে দিতে চেয়েছিল তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস বলে ঘােষণা করা হয়। ব্রিটিশের কাছে দু’শ বছর শােষিত হওয়ার পর আমরা ১৯৪৭ সালে প্রথমবারের মতাে স্বাধীন হই। কিনতু আমরা স্বাধীনতার কোনাে সুফল ভােগ করতে পারি নি। বাংলার দামাল ছেলেরা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষাকে রক্ষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা ও উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। অবশেষে চলে আসে ১৯৭১ সাল ঘটে ইতিহাসের সেই যুগ সন্ধিক্ষণ। বাংলাদেশ সৃষ্টির মহাক্ষণ। পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী তাদের সামরিক বাহিনীকে এদেশবাসীর ওপর কুকুরের মতাে লেলিয়ে দেয়। চলতে থাকে নির্যাতনের স্টিমরােলার। অবশেষে ৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে ইয়াহিয়া খানের পােষা সেনাবাহিনী ঘুমন্ত নগরবাসীর ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়।

সংকটময় দিন :
২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালে আমাদের জাতীয় জীবনে নেমে আসে এক সংকটময় দিন। এ দিনে আমরা প্রথমবারের মতাে নিজেদের শক্তি সম্বন্ধে সচেতন হই। তবে এ দিবসটি আমাদের বাঙালি জীবনে কালাে দিবস হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।

স্বাধীনতা রক্ষা :
বাংলাদেশ সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত একটি দেশ। দেশের সম্পদ সীমিত। অথচ সম্পদের তুলনায় লােকসংখ্যা অনেক বেশি। ফলে দরিদ্র আর হতাশা জাতীয় জীবনে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। জনগণের কাছে ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূল্য বড় হয়ে ধরা দেয় নি। তাই এই স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য আমাদের প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। স্বাধীনতা দিবস তথা ২৬ মার্চ বাঙালি জাতি যে উদ্যোগ নিয়ে, সাহস ও ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে। পড়েছিল, স্বাধীনতার ত্রিশ বছর পর আজ মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। এত কষ্টে অর্জিত সেই স্বাধীনতা রক্ষা করা যাবে তাে? কারণ স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। একবার এ সম্পদ হারালে তা আর সহজে অর্জন করা যায় না। যুগে যুগে ক্ষমতালােভী মানুষের নিষ্ঠুর অত্যাচারে ভূ-লুণ্ঠিত হয়েছে মানুষের স্বাধীনতা।

উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য :
আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিনটির প্রধান তাৎপর্য হচ্ছে- এ দিনে সমগ্র দেশবাসীর বহুকাল লালিত মুক্তি ও সংগ্রামের অঙ্গীকারে ভাস্বর। এই স্বাধীনতা দারিদ্র্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ। এ দিন আমাদের কাছে আত্মসমালােচনার দিন হিসেবে মিলবার দিন, আত্মজিজ্ঞাসার দিন।

পরিণতি :
দীর্ঘ নয় মাস চলে স্বাধীনতার সংগ্রাম। পাক সেনারা সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রাম, শহর সমস্ত কিছু জ্বালিয়ে দেয়। তারা এদেশের ত্রিশ লক্ষ লােককে হত্যা করে। দু’লক্ষ মা-বােন লাঞ্ছিত হয়। মুক্তি সেনারাও পাক সেনাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালাতে থাকে। এদেশের এক কোটি মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ভারতে আশ্রয় নেয়। অবশেষে ১৪ ডিসেম্বর ভারত স্বাধীন। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে ভারতের সেনাবাহিনী পাক সেনাদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে। ফলে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশটি শত্রুমুক্ত হয়।

জাতীয় জীবনে স্বাধীনতার মূল্যবােধ :
বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা দিবসটি পেয়েছি। তাকে তেমনি মর্যাদার সাথে রক্ষা করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা দিবসটি আমাদের সংগ্রামী শক্তিরই অবদান। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘােষণার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির পূর্ণ বিকাশের সুযােগ ঘটেছে। এখন সময় এসেছে স্বাধীনতা প্রকৃত উদ্দেশ্য ও আকাঙক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করার।

উপসংহার :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এদিন আমরা এমন একটি প্রতিজ্ঞা নেব যে, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এ দিবসটি পেয়েছি তাদের যেন আমরা কোনাে দিন না ভুলি। এ দিনটি চিরস্মরণীয়, চির অমর।

আরো দেখুনঃ

ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ভাষা সৈনিকদের পরিচিতি

ভাষা আন্দোলনের শহীদদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

বাংলা নববর্ষ / পহেলা বৈশাখ অনুচ্ছেদ রচনা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুচ্ছেদ রচনা

Rate this post

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top